বিশ্বজুড়ে জলবায়ু সংকট, দারিদ্র্য ও কর্মসংস্থানের অভাব আজ উন্নয়নের পথে বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে টেকসই নগর উন্নয়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ যে ভবিষ্যতমুখী ও অন্তর্ভুক্তিমূলক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে এগোচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে। নোবেলজয়ী ও বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্প্রতি বিশ্ববাসীর প্রতি একটি সাহসী ও মানবিক বার্তা দিয়েছেন—‘থ্রি জিরো ভিশন’ বা ‘তিনটি শূন্যের লক্ষ্য’ অর্জনের জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপ নিতে হবে। তাঁর মতে, শূন্য সম্পদ কেন্দ্রীকরণ, শূন্য বেকারত্ব এবং শূন্য নেট কার্বন নির্গমন—এই তিনটি লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যমেই আমরা একটি ন্যায়ভিত্তিক ও টেকসই বিশ্ব গড়ে তুলতে পারি।
এই আহ্বান তিনি জানান সোমবার (২১ এপ্রিল) স্থানীয় সময় সকালে ব্যাংককে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘের ESCAP-এর (Economic and Social Commission for Asia and the Pacific) ৮১তম বার্ষিক অধিবেশনে, একটি ভিডিও বার্তার মাধ্যমে। এই সম্মেলনে ৫৩টি সদস্য রাষ্ট্র ও ৯টি সহযোগী সদস্য উপস্থিত ছিলেন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী (প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায়) ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। এই অধিবেশনের মূল লক্ষ্য ছিল অন্তর্ভুক্তিমূলক, পরিবেশবান্ধব ও উদ্ভাবনী নগর উন্নয়ন কাঠামো গঠনের উপায় খোঁজা।
ড. ইউনূস তাঁর বক্তব্যে বলেন, টেকসই নগর গড়তে হলে তা যেন সকল নাগরিকের জন্য কার্যকর হয়—এমনই হতে হবে দৃষ্টিভঙ্গি। বাংলাদেশের উন্নয়ন যাত্রায় অন্তর্ভুক্তিমূলক শহর, কর্মসংস্থান বৃদ্ধির প্রকল্প এবং কার্বন নিঃসরণ কমানোর নানা উদ্যোগ ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি আরও বলেন, নগর ও জলবায়ু সংকট মোকাবিলায় আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধি করা জরুরি। পাশাপাশি, দেশগুলিকে তাদের যুবসমাজের উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে টেকসই ভবিষ্যৎ গঠনের আহ্বান জানান। ড. ইউনূস বিশ্বাস করেন, এই ভিশন বাস্তবায়ন হলে বিশ্বের প্রতিটি জনগোষ্ঠী একটি নিরাপদ, ন্যায়ভিত্তিক ও বাসযোগ্য শহরে জীবন যাপন করতে পারবে।
এই এএসসিএপি (ESCAP) অধিবেশন বাংলাদেশের জন্য একটি কৌশলগত সুযোগ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যেখানে দেশটি তার উন্নয়ন অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করছে এবং ভবিষ্যতের সহযোগিতার জন্য সেতুবন্ধন গড়ে তুলছে। প্রধান উপদেষ্টা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, এই সপ্তাহব্যাপী আলোচনায় অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিদল অর্থবহ দিকনির্দেশনা দেবে এবং মূল্যবান আন্তর্জাতিক অংশীদারিত্ব গড়ে তুলবে। ‘থ্রি জিরো’ ভিশনের মতো সাহসী উদ্যোগ বিশ্বকে এক নতুন যুগের দিকে এগিয়ে নিতে পারে—যেখানে উন্নয়ন মানেই হবে সকলের অংশগ্রহণ, সমতা এবং প্রকৃতির প্রতি দায়িত্বশীলতা।